ইসবগুল ‘গুল্ম’ জাতীয় গাছ। এর ফুল ছোট, পাপড়ি সূক্ষ হয়। বীজের খোসা আছে। ইসবগুল গাছের উচ্চতা দেড়-দুই ফুটের পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল দুইকোষ বিশিষ্ট, ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা হয় এবং ফলের ভিতরে ৩ মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে নৌকার মতো এবং এর খোসায় পিচ্ছিল হয়। এটা এক ধরনের রবিশস্য। এই ফসলের পরিপক্ক হোয়ার পর বীজের বাইরের আশ বা ত্বক ‘Epidermis‘ ও এর পাশে নিচের স্তর দুটি একসাথে আলাদা হয়ে আসে যা আমরা Ispaghula husk বা ইসপগুলের ভুষি – Isabgoler Bhusiবলে থাকি।
ইসুবগুলের ভুসি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। এর উপকারিতাও অনেক। উপকারী এই খাবার আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেতে চাই না। অথচ এটি আমাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে কাজ করে। ছোট-বড় অনেক অসুখেরই সমাধান মেলে নিয়মিত ইসুবগুল খেলে।
ইসবগুলের পুষ্টিগুণ
ইসুবগুলে রয়েছে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান। সেসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। ১ টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন।
ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা-
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে-
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে অনেকের। তাদের ক্ষেত্রে উপকারী একটি খাবার হলো ইসুবগুলের ভুসি। এটি নিয়মিত খেলে কমবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি সকাল ও বিকালে খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে-
কোষ্ঠকাঠিন্য এক কঠিন অসুখ। কারণ এই সমস্যাকে সাধারণ মনে হলেও আসলে তা নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক নানা ক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে পুরো শরীরেই। এই সমস্যার সমাধানে খেতে পারেন ইসুবগুলের ভুসি। এটি প্রথমে পাকস্থলীতে যায় এরপর ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি গুলিয়ে খান। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
গ্যাস্ট্রিকের দূর করে-
আমাদের দেশে বেশিরভাগেরই রয়েছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। ভুলভাল খাদ্যাভ্যাস এর বড় কারণ। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার অন্যতম ঘরোয়া উপায় হতে পারে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া। এটি পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। যে কারণে অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা পায়। এটি হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা দুধে দুই চা চামচ ইসুবগুল মিশিয়ে খাবেন। এভাবে নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে-
ডায়রিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ইসুবগুল। এটি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে কাজ করে। এদিকে ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়রিয়া দ্রুতই সেরে ওঠে। ডায়রিয়া হলে দিনে দুইবার ভরা পেটে তিন টেবিল চামচ দই ও দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাবেন। ইসুবগুলের ভুসি খেলে তা আমাশয় থেকেও আপনাকে মুক্তি দেবে।
হার্ট ভালো রাখে- হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এটি পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। যা খাদ্য হতে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়; বিশেষ করে রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক সৃষ্টির ভয় থাকে না।
খাবার নিয়ম -
বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই ইসুবগুল খাওয়ার কারণে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায় না। ইসুবগুল প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ করে ৩ বার খেতে পারবেন। তবে এটি অবশ্যই পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। সেইসঙ্গে সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পানও করতে হবে।
ইসবগুলের ভুষির অপকারিতা-
১। যেকোন খাবারই বেশি পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই উপকারী ইসবগুলেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
২। কখনো কখনো ইসবগুলের ভুষি পাকস্থলীতে টানটান ভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে ইসবগুল খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩। যদি অ্যালার্জি দেখা দেয় তাহলেও দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।
৪। যদি আপনার Appendicitis ও stomach blockage মত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ইসবগুল খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মত খাবেন।
৫। ইসবগুল অনেকক্ষণ বেশিক্ষন ভিজিয়ে না রেখে সাথে পান করার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো ইসবগুল যথেষ্ট পরিমাণ পানিতে ঢেলে যত দ্রুত সম্ভব পান করে নিন। এর সুফল পেতে এর সঙ্গে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
৬। ইসবগুলের ভুষি ঢোকর গেলা কষ্টকর তাই যাদের অন্ত্রে রোগ আছে, তাদের জন্য এটি সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
৭। সারা বছর ধরে খেলে পেটে শব্দ করে করে, ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে একটানা সাত বা দশ দিনের দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো। এছাড়া কিছু ওষুধ সেবনেও ইসবগুলের ভুসি বাধা দেয়।
৮। ইসবগুলের ভুষি দই এক সাথেখাবেন না এতে কোষ্ঠকাঠিন্য’র সমস্য হতে পারে।
কোথায় পাবেন ইসবগুলের ভুষি?
কেনাকাটায় পাবেন ইসবগুলের ভুষি।